বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৭ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপকূলের রক্ষাকবচ বেড়িবাধেঁর উপর পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ করছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ কাজে ড্রেজার মেশিন দিয়ে সংরক্ষিত বনের ভিতর থেকে বালু উত্তোলন করছে বালুখেকো প্রভাবশালী মহল। ফলে বনের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বড় বড় দিঘি। উজাড় হচ্ছে সবুজ বেষ্টনী ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও সুফল পায়নি স্থানীয়রা। উল্টো এলাকবাসীদের মামলা হামলার হুমকি দিচ্ছেন সাব ঠিকাদার। সরেজমিনে জানা গেছে, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত লাগোয়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধের উপর পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। কুয়াকাটায় আগত পর্যটক দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ওয়েডিং এন্ড এস্টেনথিং প্রজেক্ট (BDIRWSP) এর আওতায় কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের দুই দিকে ৪৮ নং পোল্ডারের বেড়িবাঁধের উপর ১৬ ফুট প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
এ কাজের ঠিকাদার ” ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স” নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। প্রথম পর্যায়ে কুয়াকাটা জিরোপয়েন্ট থেকে শুরু করে গঙ্গামতি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে বালু ভরাটের কাজ শুরু করা হয়।
এ বালু ভরাট কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় কবির হোসেন নামের স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ীকে। সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ কাজে লোকাল বালু কিনে ট্রাকে করে নিয়ে সড়কে ব্যবহারের কথা রয়েছে। কিন্তু বিধি বহির্ভূতভাবে সংরক্ষিত বন উজাড় করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ব্যবহার হচ্ছে সড়কে। এতে বনের সরল জমিসহ শত শত গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।
ফলে বনের মধ্যে বড় বড় দিঘির সৃষ্টি হয়েছে। বন কর্মকর্তারা বাঁধা দিলে শুনেছে না প্রভাবশালী ঠিকাদার। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ভূমি প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও কোন সুরাহা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল ফকির বলেন, আমি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসক, ভূমি কর্মকর্তাসহ বন বিভাগকে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তিনি দাবি করেন, যাতে এই ঠিকাদারকে কোনো প্রকার টাকা না দেওয়া হয়। যেসকল জায়গাগুলো থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে সেসব ভরাট করে দেওয়া হোক। স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মুন্সি বলেন, বেড়িবাঁধের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে আমাদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিল। বেড়িবাঁধের পাশে যে দিঘিগুলো তৈরি করা হয়েছে তা একসময় ভরাট হবে ঐ একই বালু দিয়ে।
বালু উত্তোলন চলাকালীন স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মচারীদের মাঠ পর্যায়ে তদারকি করতে দেখা গেছে। খোদ উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এ কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে।
মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য একটি চক্র গঙ্গামতি ও মম্বিপাড়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছে। বালু খেকো প্রভাবশালীদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে আইনী সহযোগিতা চেয়েও তারা পাচ্ছেন না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদেকুর রহমান বলেন, কিছুই জানেন না তিনি। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার কোথায় থেকে বালু আনলো তা মনিটরিং করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আমরা দেখি লেয়ার বাই লেয়ার কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা। সরকারি নিয়মের বাইরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। যদিও উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ একটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল।
সেখান থেকে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, তিনি শুনে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন।এরপর অবৈধভাবে আবার বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মোয়াজ্জেম হোসেন কলাপাড়া